শনিবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৭
প্রথম পাতা » জেলার খবর | তজুমদ্দিন | ভোলা | লালমোহন | শিরোনাম | সর্বশেষ » আজ ভয়াল পহেলা অক্টোবর, লালমোহন-তজুমদ্দিনবাসীর ভয়াবহ স্মৃতি।।লালমোহন বিডিনিউজ
আজ ভয়াল পহেলা অক্টোবর, লালমোহন-তজুমদ্দিনবাসীর ভয়াবহ স্মৃতি।।লালমোহন বিডিনিউজ
লালমোহন বিডিনিউজ,তজুমদ্দিন প্রতিনিধি:আজ ১ই অক্টোবর ২০০১ সালের এই দিনে বিএনপি জামায়াত- জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর লালমোহন-তজুমদ্দিনের জনসাধারনের উপর ভয়াবহ অত্যাচার নির্যাতনের নজিরবিহীন বর্বরতা চালায় তৎকালীন সংসদ সদস্য মেজর হাফিজের সন্ত্রাসী বাহিনী। ২০০১ সালের নির্বাচনের পর তৎকালীন বিজয়ী গোষ্ঠী বিএনপি-জামায়াত চারদলীয় জোট কতৃক হত্যা, লুণ্ঠন, সম্পত্তি দখল, অগ্নিসংযোগ সহ গণধর্ষণের শিকার হন এখানকার ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ সহ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও তাদের পরিবার । লালমোহন - তজুমদ্দিনে সেফালী, রিতা রাণী ও খুটা মালেকের রক্তে ও কান্নায় আকাশ বাতাস ভারী হয়ে উঠে। এ সময় সারা দেশে সাধারন মানুষের সম্পত্তি, বাড়িঘর দখল, অগ্নিসংযোগ, লুণ্ঠন, খুন ও গণধর্ষণের মতো জঘন্যতম অন্তত সাড়ে তিন হাজার অপরাধের ঘটনা ঘটে। বর্বরতার ঘটনাগুলো পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হলেও, কোন বিচার সেই সময় হয়নি। বিএনপি-জামায়াত সরকার সেসব ঘটনার বিচার করেনি, কারন তাদের লোকজনই ঘটনাগুলো ঘটিয়েছিল।
সারা দেশের ন্যায় মেজর হাফিজ বাহিনীর সন্ত্রাসীরা লালমোহন ও তজুমদ্দিনের আওয়ামীলীগের নেতাকর্মী ও তাদের পরিবারের ওপর অত্যাচার ও নির্যাতন চালায়। তাদের বাড়ি ঘর, ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান লুন্ঠন করা হতো প্রকাশ্যে লুট হতো পুকুরের মাছ, গরু, ছাগল সহ অন্যান্য সামগ্রী। কেউ বাঁধা দিলে পুলিশ দিয়ে মিথ্যা মামলায় আটক করে তাদের উপর ভয়াবহ নির্যাতন চালানো হতো। হাফিজ বাহিনীর ভয়াবহ অত্যাচার নির্যাতনের মুখে এলাকা ভিটে-মাটি ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয় তৎকালীন যুবলীগ কর্মী (বর্তমান তজুমদ্দিন উপজেলা যুবলীগের সাধারন সম্পাদক) আবদুর রহমান সহ আওয়ামীলীগের বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
তৎকালীন তজুমদ্দিন উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আবুল কাশেম তালুকদারের নির্দেশে পূনরায় এলাকায় ফিরে আসে পালিয়ে যাওয়া নেতাকর্মীরা। তখন আবারো শুরু হয় তাদের উপর অত্যাচার নির্যাতন ও বর্বরতা। হয়রানি মূলক মিথ্যা মামলা দিয়ে তাদের কে আটক করে জেল হাজতে পাঠানো হতো।
তৎকালিন যুবলীগ কর্মী আবদুর রহমান বাসা থেকে বের হয়ে তজুমদ্দিন বাজারে উঠলে মাছের টোল ঘরের সামনে তার উপর হামলা চালায় সন্ত্রাসী গ্রুপ মশা বাহিনীর প্রধান মোশারেফ হোসেন ওরফে মশার নেতৃত্বে জামাল ও মিলন সহ ছাত্রদল ও যুবদলের প্রায় ২৫ জনের একটি সন্ত্রাসী দল। তার উপর ভয়াবহ নির্যাতন চালিয়ে আহত করে তাকে বস্ত্রহীন উলঙ্গ করে ফেলে। সে তখন কোনো রকমে তাদের কাছ থেকে পালিয়ে তৎকালিন ছাত্রলীগ নেতা (বর্তমান তজুমদ্দিন উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি) আমিন মহাজনের সহযোগীতায় তাদের ঘরে গিয়ে উঠে। আমিন মহাজনের মা তার অবস্থা খারাপ দেখে তাকে একটি গামছা পরিয়ে সেখান থেকে কোনো রকমে পালিয়ে যেতে সাহায্য করে।
২০০২ সালের অক্টোবর মাসের ১৬ তারিখ থেকে তৎকালিন সেনা প্রধান লেঃ জেনারেল হাসান মসহুদ চৌধুরীর নেতৃত্বে শুরু হয় ‘অপারেশন ক্লিন হার্ট’ নামে যৌথবাহিনীর অভিযান। নিউইয়র্ক ভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচের প্রতিবেদন অনুযায়ী ‘অপারেশন ক্লিন হার্ট’ অভিযানে অন্তত ৬০ জন গ্রেফতার অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছেন। তবে সরকার সে সময় ১২ জন নিহত হওয়ার কথা স্বীকার করেন। প্রতিটি মৃত্যুর পর যৌথবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হতো ‘হার্ট অ্যাটাকে’ আসামীর মৃত্যু হয়েছে। তবে রিট মামলায় বাদী পক্ষের জমা দেয়া নথি থেকে ৫৭ জন ব্যাক্তি নিহত হওয়ার তথ্য পাওয়া যায়। আটককৃতদের জিজ্ঞাসাবাদের নামে যৌথবাহিনীর নির্যাতনে আরো বহুসংখ্যক মানুষকে পঙ্গুত্ব বরণ করতে হয়েছে বলে আদালত কে জানানো হয়। এই অভিযানে লালমোহন ও তজুমদ্দিনের অনেক নেতাকর্মীদের কে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদের নামে অত্যাচার চালানো হয়।
‘অপারেশন ক্লিন হার্ট’ অভিযান চলাকালীন সময়ে যুবলীগ নেতা আবদুর রহমান ও ইব্রাহিম সহ তজুমদ্দিনের অনেক নেতাকর্মীরা পালিয়ে ঢাকা গিয়ে তজুমদ্দিনের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান কাশেম মিয়ার বাসায় আশ্রয় নেয়। তখন তাদের কাছে খবর আসে যৌথবাহিনীরা কাশেম মিয়ার ঢাকার বাসায় অভিযান চালাবে। এ খবর শুনে নেতাকর্মীরা তার বাসা থেকে বের হয়ে বিভিন্ন জায়গায় আশ্রয় নেয়। তখন ছিলো শীতের মৌসুম। এই কনকনে শীতের মধ্যে আবদুর রহমান ও মামুন আহমেদ শাহ আলির মাজারে গিয়ে রাত্রিযাপন করেন। এ ভাবেই দীর্ঘ দিন পথে ঘাটে পলাতক অবস্থায় জীবনযাপন করেন তারা। অপরদিকে তাদের বিরুদ্ধে হয়রানি মূলক অনেকগুলো মিথ্যা মামলা সাজানো হয়। তারা সন্ত্রাসীদের ভয়ে দীর্ঘদিন কোর্টে মামলার হাজিরা দেয়নি। অবশেষে আবারো তৎকালিন আওয়ামীলীগের সভাপতি কাশেম তালুকদারের নির্দেশে তারা এলাকায় আসে এবং মামলার হাজিরা দিতে যায়। দীর্ঘদিন মামলার হাজিরা না দেওয়ার কারনে তাদের কে পুলিশ আটক করে জেল হাজতে প্রেরণ করে। তারা দীর্ঘদিনের কারাবন্দী জীবন পাড়ি দিয়ে জেল থেকে বের হয়। এভাবেই অত্যাচার অবিচারের মধ্য দিয়ে চলে যায় দীর্ঘ কয়েকটি বছর।
এরপর ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে ভোলা-৩ আসনে আওয়ামীলীগ থেকে মনোনয়ন পেয়ে জয়লাভ করেন মেজর জসিম। নেতাকর্মীদের মাঝে ফিরে আসে স্বস্তির নিঃশ্বাস। দীর্ঘদিনের অত্যাচার নির্যাতন সহ্য করে মেজর জসিমের কাছে তারা বিভিন্ন আবদার করে। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস তাদের নিজেদের দল আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় থাকার পরেও তাদের শেষ আশ্রয়স্থল তৎকালীন সংসদ সদস্য মেজর জসিমের কাছে হয়নি। মেজর জসিম তাদের কে বলতো তোমরা নির্যাতিত হয়েছো তোফায়েল আহমেদের আমলে। তখন তোমাদের নেতা ছিলো তোফায়েল অাহমেদ আমার কাছে কি? যাও তোমরা তার কাছে যাও। নেতাকর্মীরা বিরহ যন্ত্রনা ক্ষোভ নিয়ে কাটিয়ে দেয় প্রায় আরো একটি বছর।
এরই মধ্যে নির্বাচনের দেড় বছর পেরিয়ে গেলে মেজর জসিমের সংসদ সদস্য পদ বাতিল করে দেয় নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন বাতিল হওয়ার কারন হিসেবে জানা যায়, সামরিক বাহিনী থেকে অবসর গ্রহণের পর যে সময়সীমা পার হলে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা যায়, মেজর জসিম সেই সময়সীমা পার হওয়ার আগেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিলেন বলে নির্বাচন কমিশন মেজর জসিম জয়ী হওয়া সত্ত্বেও তার নির্বাচন বাতিল করে দিয়েছিলেন।
এরপর এই আসনে ২০১০ সালের মধ্যবর্তী জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামীলীগ থেকে মনোনয়ন পান তৎকালিন যুবলীগ নেতা নূরুন্নবী চৌধুরী শাওন। তিনি মনোনয়ন পেয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহন করে মেজর হাফিজ কে বিপুল ভোটে হারিয়ে জয়লাভ করেন। নূরুন্নবী চৌধুরী শাওন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে অতি অল্প সময়ে মানুষের ভালোবাসা নিয়ে মানুষের সঙ্গে মিশে মেজর হাফিজের মতো জাদরেল রাজনীতিবীদের কাছ থেকে ভোলা-৩ (লালমোহন - তজুমদ্দিন) আসনটি উদ্ধার করে সর্ব মহলে বেশ প্রশংসা কুড়িয়েছিলেন। সাংসদ শাওন নির্বাচিত হওয়ার পর ভোলা-৩ আসনের দীর্ঘদিনের অশান্তির জনপদকে শান্তির জনপদে রূপান্তরিত করেন। এখানকার গরিব দুঃখি মেহনতি সাধারন মানুষের পাশে দাড়িয়ে সুন্দর ও শান্তিময় পরিবেশের মধ্য দিয় ভোলা-৩ আসনকে নেতৃত্ব দিয়ে পরিচালনা করেন। নেতাকর্মীদের মাঝে ফিরে আসে আশার আলো। অবশেষে নেতাকর্মীরা ঠাঁই নেয় নূরুন্নবী চৌধুরী শাওনের কাছে। নূরুন্নবী চৌধুরী শাওন দীর্ঘদিনের নির্যাতিত অবহেলিত নেতাকর্মীদের কে আপন করে নিয়ে তাদের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ভোলা-৩ আসন কে নেতৃত্ব দিয়ে শান্তির জনপদে রূপান্তরিত করেন। দীর্ঘদিনের উন্নয়ন বঞ্চিত এই আসন কে সারা দেশের কাছে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে পরিচিত লাভ করান। এই দ্বীপজেলার মানুষের পাশে থেকে নির্লস ভাবে কাজ করায় এখানকার সাধারন মানুষ তাকে দ্বীপবন্ধু উপাধিতে ভূষিত করেন।