শিরোনাম:
ঢাকা, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১

Lalmohan BD News
রবিবার, ১৩ মার্চ ২০১৬
প্রথম পাতা » ফিচার | শিরোনাম | সর্বশেষ » জীবন যেমন…………………. সাফল্যের পথে আন্নু মে ॥
প্রথম পাতা » ফিচার | শিরোনাম | সর্বশেষ » জীবন যেমন…………………. সাফল্যের পথে আন্নু মে ॥
২১৩৭ বার পঠিত
রবিবার, ১৩ মার্চ ২০১৬
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

জীবন যেমন…………………. সাফল্যের পথে আন্নু মে ॥

---লালমোহন বিডিনিউজ :প্রাকৃতিক অপরুপ সুন্দর শ্যামলিমায় ঘেরা, নদী, সাগর ও পর্যটন নগরী বেষ্টিত কক্সবাজার জেলাটি অন্যান্য জনপদ থেকে একটু দুরে। এই জেলারই চৌফলদন্ডী ইউনিয়নের রাখাইনপাড়া গ্রামের দু’একজন নারী, যারা স্কুলের গন্ডি পেরিয়েছেন আন্নু মে (৩৮) তাদেরই একজন। অনেক স্বপ্ন ছিল তার লেখাপড়া করে মানুষের মত মানুষ হবে। অল্প বয়সেই পারিবারিক চাপ ও সামাজিক প্রতিবন্ধকতার মুখে বিয়ের পিড়িতে বসতে হয়েছিল তাকে। স্বামীর অভাবী সংসারে এসেও সুখ পায়নি সে। তার স্বামী থৌয়েন মংলা (৪৮) প্রতিদিন নদীতে মাছ ধরে এনে বাজারে বিক্রি করে যা পেত তা দিয়ে কোন মতে সংসার চলতো।

এখন আর না খেয়ে থাকতে হয় না। শুনতে হয় না শশুর বাড়ির গালমন্দ। কারন এখন তিনিই অর্থের যোগান দিচ্ছেন এবং দারিদ্রকে জয় করেছেন। তাদের সংসারে এসেছে স্বচ্ছলতা, স্বাচ্ছন্দ্য। আন্নু মে বাঁশ ও বেত দিয়ে নিজের হাতের তৈরী বিভিন্ন ধরনের নাপ্পীর খাঁচা, ডালা, মোড়া, কুলা এবং মৌসুম উপযোগী হরেক রকমের সামগ্রী তৈরী করেছেন এবং এই গ্রামের ৮ জন হত দরিদ্র নারীকে এ কাজ শিখিয়ে তাদের উপার্জনের পথ দেখিয়ে দিয়েছেন। এখন বেশ ভালই কাটছে তাদের জীবন।
আন্নু মে ছোট বেলা থেকেই হাতের কারুকার্য তৈরী করার প্রতি তার শখ ছিল প্রচুর বিধায় তার বাবা তাকে সাহায্য করেছিল। স্বামীর অভারী সংসারে এসেও নিজের পায়ে দাড়ানোর ইচ্ছা সব সময় তাকে তাড়িয়ে বেড়াত। চিন্তা করতেন কিভাবে দু’পয়সা বাড়তি আয় করা যায়। সংসারে কোল জুড়ে আসে পর পর দুটি ছেলে ও ১টি মেয়ে সন্তান। তাদেরকেও মানুষ করার দৃঢ় স্বপ্ন সব সময়ই দেখতেন। ১৯৯১ সালের ঘূর্নিঝড় লন্ডভন্ড করে পুরো এলাকাটি। তিনি অনেক ঘূর্নিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের কথা শুনেছে কিন্তু বাস্তবে কখনো দেখেনি সে প্রকৃতির তান্ডবলীলা। তার জীবনে দেখা সে দিনের তান্ডব। এমন ভয়াবহ দৃশ্য সে আর কখনো দেখেনি। ক্ষুধার্ত দানবের থাকায় তছনছ করে দিয়েছে আন্নু মে এর সামান্য মাথা গুজবার ঠাঁইটুকুও।
এরপর তার বাবা ও আতœীয় স্বজনের পরামর্শক্রমে স্থানীয় বাজার থেকে বাঁশ ও বেত কিনে এনে বাড়িতে বসেই হাত দিয়ে শুরু করেন নাপ্পীর খাঁচা তৈরীর কাজ। প্রথমে সপ্তাহে ২দিন স্থানীয় বাজারে বিভিন্ন দোকানে বিক্রি করার সুযোগ করে দেন তার স্বামী। বিক্রিকৃত টাকা হাতে পেয়ে তার মধ্যে অনুপ্রেরনা ও সাহস যোগায়। শুরু হয় এগিয়ে চলা। নতুন নতুন স্বপ্ন উঁকি দেয় তার মনে। এ কাজে প্রথমে তার স্বামী সাড়া দেয়নি।
এরই ফাঁকে চৌফলদন্ডী এডিপি, ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ তাকে বিভিন্ন এনজিও সংস্থার সাথে সংযোগ স্থাপন করে দেয় যাতে আয়বৃদ্ধিমুলক প্রকল্পের মাধ্যমে আর্থিক সহায়তা পেতে পারে এবং বর্তমানে রাখাইন পাড়ায় প্রি-স্কুল স্থাপনের মাধ্যমে অসহায় শিশুদেরকে শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়।
বর্তমানে মুক্তি কক্সবাজার, গ্রামীন ব্যাংক ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা হিসেবে তাকে ঋন দিয়ে আর্থিকভাবে এ কাজে সহায়তা করছে। বহু কষ্টে দু’ছেলে ও মেয়েটিকে সংসারের অভাব অনটনের মধ্য দিয়েও মানুষ গড়ার প্রত্যয়ে লেখাপড়ার দিকে মনোনিবেশ করিয়েছে।
তার স্বামী থৌয়েন মংলা জানান, এক সময়ে সমাজে মাথা নিচু হয়ে থাকতে হতো। এখন সবাই ডেকে কথা বলে। তার স্ত্রীর গুনের কথা প্রসংশা করে ।
স্বামীর সংসারে এসে সুখের ছোয়া পায়নি সে। এ কাজের আগে বারো মাসই তাদের সংসারে অভাব অনটন লেগেই থাকতো। এখন তিন বেলা খাবার জুটছে। তিনি জানান যে, নাপ্পী’র খাঁচা সামগ্রী তৈরিতে ১০ টাকা খরচ করতে হয়, কিন্তু বিক্রি হয় ২০ টাকায়। প্রতিদিন কমপক্ষে ১০০টি নাপ্পী’র খাঁচা তৈরী করা যায় একজনের পক্ষে।
বর্তমানে আয় হয় বেশ ভালই। তিনি জানান যে, উক্ত উপকরন সামগ্রী বিক্রিত টাকা যখন হাতে পাই তখনই খুব আনন্দ লাগে। সংসারের অভাব যে কিভাবে পালালো তার কোন টেরই পাইনি।
এই সাফল্যেও পথটি যিনি দেখিয়েছিলেন তার বাবা। তাকে তিনি শ্রদ্ধাভরে স্মরন করেন।
চৌফলদন্ডী ইউনিয়নের ইউপি সদস্যা আখিন রাখাইন বলেন, আন্নু মে’র মধ্যে দুর দৃষ্টি রয়েছে বিধায় তার সফলতা আসতে শুরু করেছে। নিজেই স্বাবলম্বী হওয়ার পথ খুঁজে পেয়েছে অন্যদেরকেও নিজের পায়ে দাড়াতে সহায়তা করেছেন।
আন্নু মে’র স্বপ্ন! এক সময়ে এই গ্রামে হত দরিদ্র নামক শব্দটি মুছে ফেলা, যার মাধ্যমে তাদেরকে এ পেশায় নিয়োজিত করে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করতে বাকি জীবনটা ব্যয় করার ইচ্ছা।

প্রতিবেদন তৈরীতে :
আবদুল হামিদ



আর্কাইভ

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)